মঙ্গলবার ● ২৬ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য ডাইরি » #মায়ার_সংসার
#মায়ার_সংসার
রেজওয়ানা আসিফা ::
“একটা বাচ্চাকে ঠিক মতো খাওয়াতে পারো না। আবার আরেকটা পেটে নিলে কীভাবে? তোমাদের এতো সখ আর ঢং দেখে বাচিনা। ”
বড়ো জা তার আদরের ছেলের মুখে মুরগির রান টা তুলে দিচ্ছিলো আর ঠিক এইভাবেই আমাকে কথা গুলো শোনাচ্ছিলো। মেঝো জা তালে তাল মিলিয়ে বললো,
- বোঝোনি দিদি আমাদের উপর ছেলে মেয়ে মানুষ করার ধান্দা।
আমার চোখে পানি টল টল করছিলো। কোনো কথা বলতে পারছিলাম না।
৫ বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করে এ বাড়ি এসেছিলাম। আমার স্বামী সবার ছোট তার বড়ো আরো তিন ভাই আছে। আমার স্বামী সামান্য কিছু টাকা দিতে পারে সংসারে। বাজারে একটা ফার্মেসী আছে। সে দাতের ডাক্তার। তেমন চলে না। মাস শেষে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আসে। আমি অনার্স পাশ করা একটা মেয়ে। অনেক ভালো ভালো চাকরি পেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম স্বামীর পাশে দারাবো কিন্তু এই বাড়ির কড়া নিয়ম ঘরের বউ বাইরে কাজে যেতে পারবে না। আবার মাস শেষে যখন আমার স্বামী সংসারে টাকা কম দেয়। শশুর মসাই কতো কথাই না শোনায়। বেচারা চুপ করে শোনে। আমার জীবনে আমি তার মতো শান্ত মনের মানুষ দেখিনি। কখনো একটা ঝাড়ি মেরে কথা বলেনি আমাকে। গায়ে হাত তোলা তো দূরে থাক। যখন আমি সবার কথা শুনে কান্না করতাম তখন আমার হাত গুলো ধরে বলতো আর একটু সহ্য করো মায়া। সব ঠিক হয়ে যাবে। বাকি তিন ভাই খুব ভালো জব করে। মোটা টাকা বেতন পায়। তাছাড়া আরো বারতি ঘু*ষ তো আছেই। আমার মেয়ের বয়স তিন বছর। এই সময়টাতেই বাচ্চাদের একটু ভালো মন্দ খাবার দেওয়া উচিৎ কিন্তু বাড়িতে প্রতিদিন মাছ মাংস আমি নিজে হাতে রান্না করি তবে আমার মেয়ের কপালে সেই ঝোলি জোটে।
আজকে সব কাজ শেষে যখন গোসলে যাই হঠাৎ মাথাটা ঘুরে যায়। পরে তারাই ডাক্তার ডেকে আনে। নাহলে বাড়ির সব কাজ করবে কে। ডাক্তার এসে দেখে বলে আমি মা হতে চলেছি। এর পর থেকেই একেক জনের একেক কথা শুনছি।
আমার শাশুড়ি মা চুলে তেল দিতে দিতে বললো।
-তোমার এই বাচ্চা খাওয়াবে কে? এতো বিবেক ছাড়া মেয়ে জীবনে দেখিনাই। দেখছো তোমার স্বামীর ইনকাম নাই তার উপর আবার বাচ্চা। একটা মেয়েকেই তো একটু ভালো মন্দ খাওয়াতে পারোনা। আমি এই রকম কথা গুলো আর শুনতে পারছিলাম না। দৌরে ঘরে চলে গেলাম। সারাদিন কাজ শেষে রাতে আমার স্বামী বাড়ি ফিরতেই আমার শাশুড়ি তাকে ডেকে ঘরে নিয়ে গেলো। আমি বাইরে দারিয়ে আছি কিন্তু আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। কিছুক্ষন পর আমার স্বামী সুমন বেরিয়ে এলো। এসে আমার দিকে তাকিয়ে হাতে একটা মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে সোজা ঘরে চলে গেলো। মিষ্টির প্যাকেট টা দেখে একটু অবাক হলাম কারণ ও কিছু জানেনা। আমিও জানতাম না আজকে জানলাম। তাহলে কোন কারণে মিষ্টি এনেছে। কাজ শেষ করে হাত মুছতে মুছতে ভয়ে ভয়ে ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি মেয়ের সাথে খেলছে। আমি ঘরে যেতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো তার এমন কাজ দেখে তো আমি অবাক। এবং মেয়ে তাকিয়ে আছে বলে লজ্জা ও পাচ্ছি। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।
-তুমি কোনো চিন্তা করোনা মায়া! আমার এই বাচ্চা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আরো আমি খুশি। আমাদের দুই টা বাচ্চা হবে।
মনে মনে বললাম শাশুড়ি বিচার দিয়েছে ওর কাছে। কিন্তু ওর কথায় আমি অনেক শান্তনা পেলাম।
সকালে সবাই খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছে। আমার বড়ো জা তার ছেলেকে মাংস বেড়ে বেড়ে খাওয়াচ্ছে। এ দিকে আমার মেয়ের পাতে একটা মুরগির গিলা পরে আছে। এই বাড়ির সব কাজ সব রান্না আমি করলেও পরিবেশন করার অনুমতি আমার নেই। আমার মেয়ের এই টুকু বুদ্ধি হয়েছে ভালো খাবার কাকে বলে এই টুকু সে বোঝে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-ও মা আমাকে মাংস দেও না কেনো?
আমার বড়ো জা মুখ কালো করে বললো।
-যার বাবার ইনকাম কম তার মাংস খাওয়া পাপ সোনা। তোমার বাবার ইনকাম কম তাই তোমার মাংস খাওয়া পাপ।
আমার মেয়ে আর কোনো কথা বললোনা। তার বড়ো কাকি কি বলেছে সে বুঝতে পারেনি। কিন্তু এটা সে ঠিকি বুঝেছে তাকে মাংস দিবে না। আমি খেয়াল করলাম আমার স্বামী খাবার খেতে খেতে সব শুনেও না সোনার ভান করে খেয়ে উঠে গেলো। সবার খাবার শেষ হলে বাসন ধুতে গিয়ে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি পানি পরছে। খুব কাদতে ইচ্ছে করছে। কেনো এমন হলো?
বিকেলে মেয়েকে নিয়ে পড়তে বসেছি। হঠাৎ দেখলাম সুমন এসেছে। হাতে সুন্দর একটা বড়ো কাপড়ের ব্যাগ। নতুন কিনে এনেছে। আমার হাতে ব্যাগটা দিয়ে বললো,
-সব জামা কাপড় গোছাও আমি গোসল করে আসছি।
আমি কিছু জিগ্যেস করার আগেই সে গোসলে চলে গেলো। আমার মেয়ে ব্যাগ দেখে খুশিতে হাত তালি দিয়ে বললো, বেড়াতে যাবো মা।
কিছুই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ সব গোছাতে কেন বললো।
ব্যাগটা পাশে রেখে মেয়েকে নিয়ে আবার পড়তে বসলাম। সুমন ঘরে এসে রেগে বললো।
-কি হলো? তোমাকে সব গোছাতে বলছিনা?
আমি দারিয়ে জিগ্যেস করলাম,
-কেনো? কোথায় যাবো আমরা?
-এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।
-কেনো? এই বাড়ি থেকে গিয়ে কোথায় থাকবত? পাগল হয়ে গেছো?
সুমন অনেক জোরে বললো।
-এতো কথা কেনো বলছো মায়া? আমি যা বলছি সেটা করো।
ও কখনো জোরে কথা বলেনা। ওর এতো জোরে কথা শুনে আমার শশুর শাশুড়ি এবং সেঝো জা বেড়িয়ে এলো।
শশুর পান চিবাতে চিবাতে বললো,
-কি হয়েছে? তুই বিকেলে বাড়ি ক্যা? আর এমনে চিল্লাচ্ছিস কেনো?
সুমন সেদিকে কোনো কান না দিয়ে আমার সাথে কাজে হাত দিলো। আমার শাশুড়ি এসে বললো,
-কি আবার নাটক শুরু করলি রে? তোদের ঢং দেখলে শরীর জ্বালা করে।
সুমন পিছ ফিরে উত্তর দিলো,
-আর জ্বালা করবে না গো মা। চলে যাবো তোমাদের এখান থেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #থেকে #ফেসবুক #মাধ্যম #যোগাযোগ #সংগৃহীত #সামাজিক