রবিবার ● ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » মৌলভীবাজার » আমরা চাই না বারবার জাতি প্রতারিত হোক —-মৌলভীবাজারে জামায়াত আমির
আমরা চাই না বারবার জাতি প্রতারিত হোক —-মৌলভীবাজারে জামায়াত আমির
নিজস্ব সংবাদ :: জুলাই আন্দোলনের বীর সৈনিকদের ‘বুকের ভিতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ স্লোগানটি উচ্চারণ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন- আমরা চাই না বারবার জাতি প্রতারিত হোক। আমরা চাই ঘুষ, দূর্ণীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত একটি বাংলাদেশ। আমরা সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। বৈষম্যকে নির্বাসনে পাঠাবো। মেধার স্বীকৃতি প্রদান করবো, পলিটক্রেসি নয়, মেরিটক্রেসির ভিত্তিতে জাতি গঠন করবো। যুবকদেরকে শিক্ষা দিয়ে বেকারের হাত বাড়াবো না, যুবকদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করবো। এখানে কেউ ধর্ম, লিঙ্গ বিবেচনায় নয়, নারী পুরুষ নির্বিশেষে যার যার যোগ্যতায় কাজ করবে। ২১ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন- সাড়ে ১৫ বছর আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। কিন্তু, আন্দোলনের পরিসমাপ্তি আমরা ঘটাতে পারিনি। স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পারিনি। আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করেছে। আমাদের সন্তানদেরকে আমি ভালবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাতির পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। ইনশাআল্লাহ আগামির বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতেই তুলে দেব। ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের ব্যাংক, বীমাসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটেপুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। দেশ ছেড়ে পালায়, যারা সন্ত্রাসী ও অপরাধী। দেশ ও জনগণকে যে ভালোবাসে, সে কখনও পালায় না।
তিনি বলেন- মৌলভীবাজার একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। প্রবাসীদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এ জেলায় সরকারিভাবে কোনো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। এ জেলায় নেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, নেই কোনো মেডিকেল কলেজ, নেই ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় বা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের সবচেয়ে বেশী চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। সরকারি নজরদারির অভাবে জেলার চা শিল্প ধ্বংস হবার পথে। মালিক পক্ষ চায়ের যথাযথ মূল্য পান না। শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক পান না। তিনি প্রশ্ন করে বলেন- মৌলভীবাজার কি অপরাধ করেছে ? এদেশে মৌলভীবাজারের কি কোনো উন্নয়নমূলক অবদান নেই ? আগামি একনেকে মৌলভীবাজারে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ দিয়ে যেন অন্য কোন উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেই দাবি জানান তিনি।
জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী ও সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ও মোঃ আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ফয়জুল কবির ময়ূন, হেফাজতে ইসলামীর জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবদুস সবুর, মৌলভীবাজার জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমদ খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর শাখা সভাপতি তারেক আজিজ, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, বড়লেখা উপজেলা সাবেক আমীর মোঃ কমর উদ্দিন, মৌলভীবাজার পৌর শাখা আমীর ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলা আমীর মোঃ এমদাদুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলা আমীর আবু রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিম, জুড়ী উপজেলা আমীর আব্দুল হাই হেলাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আমীর মাও. ইসমাঈল হোসেন ও কমলগঞ্জ উপজেলা আমীর মোঃ মাসুক মিয়া।
এর আগে হাফেজ মাহবুবুর রহমানের অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন মৌলভীবাজার জেলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীগোষ্ঠী।
জামায়াত আমির বলেন- সাড়ে ১৫টা বছর তারা জাতির ঘাড়ে বসে সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশটাকে শ্মশান কিংবা গোরস্তানে পরিণত করেছিল। ২৮ অক্টোবর তারা লাশের ওপর নর্দন করেছে। একটি জঘন্য সরকারে হাত ধরে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছিল। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসে প্রথমে তারা পিলখানায় ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি চৌকস ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে খুন করে। বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে খুনিদেরকে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেয়। একটা বিশেষ দেশের বিমান ঢাকায় এসেছিল কেন ? এরপর হঠাৎ উধাও হয়ে গেল কিভাবে ? বিডিআর বাহিনীর সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে চাকুরীচ্যুত করে। সাড়ে ৮ হাজার সদস্যকে জেলে দেয়। জেলের ভেতর এদের মধ্যে সাড়ে ৩ শতাধিক মারাই গেল। আমাদের গর্বের বাহিনী ধ্বংস করা হলো। লোগো বদলিয়েছে, ড্রেস বদলিয়েছে, বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) নাম বদলিয়ে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) করেছে।
তাদের তান্ডবের প্রথম লক্ষ্যবস্তু করলো জামায়াতে ইসলামীকে; যারা পরিক্ষিত দেশপ্রেমিক। তারা ঠাণ্ডা মাথায়, মিথ্যা অভিযোগ, সাজানো কোর্ট, পাতানো স্বাক্ষী এবং ব্রাসেলস থেকে রায় এনে দেশপ্রেমিক জামায়াত নেতৃবৃন্দকে খুন করলো, ফাঁসি দিলো, কাউকে কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো, কেউ কেউ জেলের ভেতর মৃত্যুবরণ করলেন। তারা বিএনপিকে ধরলো, হেফাজককে ধরলো, আলেম ওলামাকে ধরলো, অন্যান্য দলকে ধরলো। কাউকে তারা ছাড় দিলো না। এমনকি এই যে, সাংবাদিক বন্ধুরা আজকে এসেছে নিউজ কাভার করতে; তাদেরকেও ধরলো। খুন করলো, গুম করলো। আয়না ঘরে পাঠালো, কাউকে কাউকে ভারতের বর্ডারের ওপাড়ে নিয়ে ফেলে দিলো। এভাবে তারা সারাটা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল। মানুষের ভোটকে জেনোসাইড করেছিল, ভোটের গণহত্যা করেছিল। তাদের নৈতিক সাহস ছিল না দেশে থাকার। এজন্য দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। আমরা সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। প্রত্যেকটা অন্যায় অপরাধের বিচার বাংলার মাটিতে করতে হবে। জাতিকে তারা ৫৩ বছর বিভিন্ন কায়দায় ফ্যাসিজমের মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মেজরিটি শক্তি, মাইনরিটি শক্তি, কতভাবে যে ভাগ করেছে এরা।
ভারতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- প্রতিদেশী দেশকে বলতে চাই-আপনারা শান্তিতে থাকুন, আমাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দিন। আপনাদের পাকঘরে কি পাকাবেন আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাকঘরে উকি দেয়ার চেষ্টা করবেন না। নিজেরা আয়নায় চেহারা দেখুন। আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবক দিতে হবে না।
সমাবেশ শেষে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান মৌলভীবাজার জেলার বিশিষ্টজন, সুধী ও পেশাজীবি সহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন।
বিষয়: #মৌলভী/বাজার/জামায়াত/কর্মী/সম্মেলন