

মঙ্গলবার ● ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা ও সদিচ্ছাহীনতার কারণে- মৌলভীবাজারে বেআইনীভাবে জমি-পাহাড়-টিলা কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা
আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা ও সদিচ্ছাহীনতার কারণে- মৌলভীবাজারে বেআইনীভাবে জমি-পাহাড়-টিলা কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা
জিতু তালুকদার, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার জেলায় বন্ধ হচ্ছেনা আবাদি জমি-পাহাড়-টিলা কাটা ও বালু উত্তোলন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় টপ সয়েল (আবাদি জমির উপরাংশের উর্বর মাটি) ও পাহাড়-টিলা কেটে মাটি এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে অবাধে। ফলে, আবাদি জমির উর্ব্বরতা হ্রাস ও পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ক্রমশঃ। ইট তৈরী, রাস্থা নির্মাণ, বসতভিটা উঁচু করাসহ নানা কাজে এ টপ সয়েল ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৩ মাস ইটভাটা ব্যবসায়ী, টপ সয়েল ব্যবসায়ী ও আবাদি জমির মালিকরা টপ সয়েল ক্রয়-বিক্রয় করেন। চলতি বছর টপ সয়েল ক্রয়-বিক্রয় অন্যান্যবারের চেয়ে বেশী হচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলায় অধিক সংখ্যক ইটভাটা থাকায় টপ সয়েলের চাহিদা বেশী। ফলে, বিপুল পরিমান টপ সয়েল ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। অবস্থান ও প্রকার ভেদে প্রতিহাজার ঘনফুট টপ সয়েল ৮শ থেকে ১২শ টাকা মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। আবার দূরত্ব অনুযায়ী পরিবহন খরচের ওপর টপ সয়েলের মূল্য কম-বেশী হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিহাজার ঘনফুট টপ সয়েল ৩শ থেকে ৪শ টাকা মুনাফায় জেলার বিভিন্ন ইটভাটা মালিক এবং রাস্থা নির্মানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন। এর মধ্যে ইট পোড়ানোর উপযোগী টপ সয়েলের মূল্য বেশী। প্রতিবছর জমির টপ সয়েল বিক্রি বা অপসারণের কারনে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পার্শ্ববর্তী আবাদি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও গাছপালার ভীত দূর্বল হয়ে পড়ছে।
একইভাবে জেলার বিভিন্ন পাহাড়-টিলা কেটে মাটি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে অবাধে। আবাসিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান, সমতলকরণ, রাস্থা নির্মাণ, বসতভিটা উঁচু করা, পুকুর-জলাশয় ভরাট ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে এ মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। টপ সয়েল ও পাহাড়-টিলা কাটার অনুরুপ জেলার বিভিন্ন খাল, ছড়া ও নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ করা হচ্ছে অবাধে। বৈধভাবে বালু উত্তোলণকারীরাও যথাযথভাবে মানছেনা সরকারী নীতি-নির্দেশনা। অনেকে বৈধতার মেয়াদ শেষ হলেও বালু উত্তোলণ অব্যাহত রাখে দীর্ঘদিন। আর, আবাদি জমির মাটি বা টপ সয়েল পরিবহণ, পাহাড়-টিলা কাটা মাটি পরিবহণ এবং খাল, ছড়া ও নদী থেকে উত্তোলিত বালু পরিবহনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাস্থাঘাট। ধূলাবালিতে সয়লাব হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি।
আবাদি জমির মাটি কাটা বা অপসারণ, পাহাড়-টিলা কাটা ও মাটি অপসারণ এবং খাল, ছড়া ও নদী থেকে বালু উত্তোলণ অপরাধ। এসব অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো প্রায় নিরব। কদাচিৎ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ছাড়া তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়না দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। অবৈধ ও বেআইনীভাবে জমি-পাহাড়-টিলা কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ না হবার জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা ও দায়িত্বশীলদের সদিচ্ছাহীনতা। লিখিত অভিযোগ করলেও, নির্দেশনা, নির্দেশপত্র প্রস্তুত, তদন্তের জন্য প্রেরণ, হাওলা, তদন্ত, প্রতিবেদন প্রস্তুত, নির্দেশদাতা কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ ও পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছরও অতিক্রান্ত হয়। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ সত্তেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস দ্রুত তদন্ত করেনা, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়না, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তদন্তই করেনা। অনেক ক্ষেত্রে ‘মামলা দায়ের কিংবা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের’ জন্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ সত্তেও পুলিশ তা ‘দ্রুত’ কার্যকর করেনা। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ‘কার্যকরই’ করেনা।
অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত তদন্ত, দ্রুত প্রতিবেদন ও দ্রুত মামলা দায়ের কিংবা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ন্ত্রিত হয় আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। অর্থাৎ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের অধঃস্তন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আর্থিক সুবিধা দিলে সবকিছু অভিযোগকারীর পক্ষে ও দ্রুত সম্পন্ন হয়ে যায়। আর, আর্থিক সুবিধা না দিলে সব কার্যক্রমই দীর্ঘায়িত হতে থাকে। ততদিনে অভিযুক্তদের কার্যসিদ্ধি হয়ে যায় এবং অভিযোগের আলামতও নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় চাপা পড়ে যায় অপরাধ এবং পাড় পেয়ে যায় অপরাধী। ফলে, ক্ষতিগ্রস্থ হয় অভিযোগকারী এবং লাভবান হয় অভিযুক্ত। এসব কারণে নেতিবাচক এসব কার্যক্রম বন্ধে সচেতন মানুষও এখন সহায়ক ভূমিকা পালণে আগ্রহী হননা। উপরোক্ত নানা কারণেই মৌলভীবাজারে অবৈধ ও বেআইনীভাবে আবাদি জমি-পাহাড়-টিলা কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা।
বিষয়: #আমলাতান্ত্রিক #উত্তোলন #কাটা #জমি #টিলা #দীর্ঘসূত্রিতা #পাহাড় #বন্ধ #বালু #বেআইনীভাব #সদিচ্ছাহীনতা